স্ত্রীর হত্যাকারী ব্রেন্টনকে নিয়ে যা বললেন ফরিদ

ডেস্ক রিপোর্ট – আল-নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হোসনে আরা পারভীনের স্বামী ফরিদ আহমদ হত্যাকারীকে ভালোবাসেন বলেন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবেও তিনি দাবি করেন। বিবিসি ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফরিদ আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘স্ত্রীকে হারিয়েছি কিন্তু হত্যাকারীকে আমি ঘৃণা করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমি তাকে ভালোবাসি। কিন্তু দুঃখিত যে, হামলাকারী যা করেছেন, তা আমি সমর্থন করতে পারছি না।’

হত্যাকারী সম্পের্কে ফরিদ আহমদ মন্তব্য করেন যে, জীবনের কোনো এক সময় হয়তো সে আঘাত পেয়েছে। আঘাতের ইতিবাচক উপায় সে প্রকাশ করতে পারেনি। আর তাতেই সে (সন্ত্রাসী হামলার মতো) ভুল কাজ করেছে। তার (সন্ত্রাসী হামলাকারীর) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে সঠিক পথ দেখান।’

ফরিদ আহমেদ জানান, ‘যারা সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে, তারা চায় মানুষজন তাদের ভয় করুক। তারা এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর উত্তেজনা তৈরি করে থাকে। তাদের ধারণা, যদি মুসলিমদেরকে তারা আঘাত করে তবে মুসলিমরাও নিশ্চয় প্রতিশোধ নেবে।’

তাই মুসলিম নেতাদের বলছি, ‘প্রতিশোধ নয়; এ সব সন্ত্রাসী হামলার কারণে আমরা কাউকে ভীত হতে কিংবা অন্যদেরকে ঘৃণা করতে দেব না।’

সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট সম্পর্কে ফরিদ আহমদ বলেন, ‘তার (হামলাকারীর) সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তার জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে সঠিক পথ দেখান। যাতে একদিন এ হত্যাকারীও ত্রাণকর্তা হতে পারেন।’

সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহ দৃশ্য ও রক্ত বন্যা তিনি হুইল চেয়ারে বসে বসে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি দেখেছেন বাঁচার জন্য কিভাবে একজন অন্যজনকে ধাক্কা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে স্থানে আহত ও নিহত লোকজন এমনভাবে পড়ে আছে যে, বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

তিনি নিজেও ভাবছিলেন, ‘কিভাবে বের হবেন এখান থেকে। তখন তিনি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছিলেন। আর নিজেকে বলছিলেন, শান্ত হও। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই, যা ঘটার তাই ঘটবে।’

স্ত্রীকে নিয়ে ফরিদ আহমদের গর্ব হয়। তার স্ত্রী কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন। মসজিদে শিশুদের পড়াতেন। মৃত্যুর আগেও সে হামলাকারীর আক্রমণ থেকে অন্য শিশু ও নারীদের বাঁচানোর সহযোগিতা করে স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। জয় করেছেন লাখো মানুষের হৃদয়।

তার একমাত্র মেয়েকে তিনি হোসনে আরা পারভীনের এ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অনুপ্রেরণা দিয়ে সে স্মৃতিকে ধারণ করেই বেঁচে থাকার উৎসাহ দিয়েছেন।